বেকারত্বের গল্প ◑ দাম ছাড়া খাম ◑ রহিম রোমান ◑ গল্প কবিতা

দামছাড়া খাম

লেখকঃ- রহিম রোমান

বাংলাদেশে এই বছর ৬৭ জন বেকার  যুবক আত্মহত্যা করেছেন মানসিক অস্থিরতা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য।

বাবার সাথে সকালের নাস্তা করতে করতে টিভি দেখছিলাম। হঠাৎ এই নিউজটা শুনে বুকটা কেমন জানি করে উঠলো। বাবাও মুখটা ফ্যাকাসে করে অফিসের দিকে চলে গেলেন।

আমি রনি। এসএসসি এক্সামও শেষ, তাই আপাতত হাতে কোনো কাজ নেই...

তাই সকালবেলাই মাঠের দিকে চললাম,বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিবো বলে।যেতে যেতেই একটা মানুষকে দেখলাম ডাক বাংলোর সামনে ইটের কংকর নিয়ে রাস্তার উপর কি যেন আঁকছেন।

বেশ ভদ্র, পরিপাটি, ছিমছাম পোশাক পরা,চোখে কালো ফ্রেমের চশমা।দেখতে তো খারাপ না,কিন্তু উনি এখানে কি করছেন!!!

কাছে যেতেই বললেন,এই!! এদিকটাই এসো না..

এখানে একটা কঠিন অংকের সমাধান করছি আমি...

আমিও হাসতে হাসতে চলে এলাম...

মনে করলাম হয়তো পাগল হবে!!আর নয়তো কে ই বা এমন করে অংক কষে!!

এর কয়েকদিন পরে আবারো দেখলাম, কয়েকটা বড় বড় বই নিয়ে পড়ছেন!! আমার আবার পড়ার প্রতি তেমন একটা আগ্রহ নেই...

তাই ইগনোর করে চলে আসলাম।

হঠাৎ,পাগল লোকটা এসে বলল,এই ছোকরা পড়ালেখা কি করিস!! না করলেও সমস্যা নেই,এদেশে কিচ্ছু হবে না!!

আমি বললাম, কেন??

সে বলল,অত কথা বলতে পারবো না!!

তার কাঁধে একটা মিডিয়াম সাইজের স্কুল ব্যাগও দেখলাম..

আমি জিজ্ঞেস করলাম,ওটাতে কি আছে!! 

সে বলল, ময়লা, আবর্জনা!!

এরপর আর কিছু না বলে, চলে গেলো।

এরই মধ্যে কেটে গেল,১ মাস।

একদিন,আমাদের স্কুলের সামনের দেখলাম,ঐ পাগলটাকে একটা মধ্যবয়সী লোকটা খাম হাতে টানাটানি করছে,আমি কাছেই জিজ্ঞেস করলে কিছু বললেন না।পরে নিরাশ হয়ে মাঠেই বসে রইলেন।

তারপর আমি বললাম,মুরব্বি, উনি আপনার কে?? উনার সম্পর্কে কি আপনি কিছু জানেন??

তখন,মুরব্বি বলল, সে আমার ছেলে,২০১৩ এর দিকে,সে ছিল,দেশসেরা ছাত্র। 

আমি বললামঃ তার এই অবস্থা হলো কিভাবে?? 

মুরব্বি বললেন, আসলে সে অনেক ভালো ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও তার কোনো চাকরি হয়নি।

অনেক চাকরি হয়েও, ঘুষের কারণে হয়নি। এভাবে ৪৫ টা ইন্টার্ভিউ দেওয়ার পরও,তার কোনো চাকরি হয়নি।

তার জায়গায় অনেক অযোগ্য লোক অনেক বড় বড় পদের অধিকারী। এরপর,আমি আর তার পড়ালেখার খরচ বহন করতে পারছিলাম না। স্বল্প আয়ের চাকরির কারণে।  তার ইন্টার্ভিউয়ের ফরম কেনার জন্য,তার মায়ের হাতের বালাগুলো বিক্রি করে,তাকে টাকা দিলাম।

কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হলো না।

তার মা বালাগুলো তার বউয়ের জন্য রেখেছিলো।কিন্তু এসব আশা আমাদের জন্য নয়। আজকে অনেক কষ্টে একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির জবের জন্য ইন্টার্ভিউয়ের ব্যবস্থা, অথচ সে যেতে চাচ্ছে না।

তখন,লোকজন, সবাই বুঝিয়ে তাকে রাজি করলো,ইন্টার্ভিউ দেওয়ার জন্য।

এরপর, সে ইন্টারভিউয়ের রিটেনে,লিখে দিয়ে আসলো...

দামছাড়া খাম!!!

কিভাবে টানবে বেকারত্বের লাগাম!!!

এরপর শুরু হয়ে গেলো,ফেসবুক,টুইটারের ইউজারদের পোস্ট।

তাতে তো আর পাগলের কিছু যায় আসে না।।

এরপর,একদিন, সে একটা নিউজকে বলেছিলো..

যেখানে আমার যোগ্যতার দাম নেই,যেখানে,আমার চাকরির জন্য দারোয়ানের পা ধরতে হয়...

সেখান থেকে আমি ভালো কিছু আশা করি না...

এভাবেই হারিয়ে যায় হাজারো সেরা ছাত্রছাত্রী।

মন্তব্যসমূহ